নৌকা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে রচনা

0
নৌকা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে রচনা

হেলো বন্ধুরা।আজকে আমরা আমাদের এই পোস্টে নৌকা ভ্রমণ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা জানার চেস্টা করব। ভ্রমন সবাই পছন্দ করে।আর সেটা যদি নৌকা ভ্রমণ হয় তাহলে তো আর কথাই নেই।নিচে নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দেওয়া হলঃ-

নদীমাতৃক দেশ আমাদের বাংলাদেশ। বাংলাদেশে অনেক নদ-নদী আছে।প্রকৃতির অফুরন্ত ভাণ্ডার চারিদিকে রয়েছে পর্বত, অরণ্য, সমুদ্র ও নদী। এদেশকে নদী মায়ের মতােই আঁচলে আঁকড়ে ধরে রেখেছে।তাই আমরা ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশ’ বিশেষণটি ব্যবহার করি।আর যেখানে নদী সেখানে নৌকা থাকবে না সেটা কি করে হয়।আজকে সেই নৌকায় ভ্রমণ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এসএসসি পরীক্ষায় পর দীর্ঘ অবসরই ছিল নৌকা ভ্রমণের আদর্শ সময়। এ সময় নদীতে তেমন স্রোত থাকে না। তাছাড়া মাছ ধরার তেমন ভিড়ও থাকে না। ভ্রমণের আগের দিন আমি ভীষণভাবে উফুল্ল ছিলাম। যদিও বাড়ির সবাই বেশ চিন্তায় ছিল। প্রচুর শুকনাে খাবার, ফ্লাক্স ভর্তি চা, একটি ডিজিটাল ক্যামেরা, মাথায় দেয়ার ছাতাসহ একটি বড় ট্রাকের টিউব নিয়ে নিলাম যদি কোনাে দুর্ঘটনায় পড়ি টিউবটি আমাদের ভেসে থাকতে সাহায্য করবে। চারঘাটের খেয়া পারাপার ঘাট থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। কাশেম চাচা এ অঞ্চলের খুব অভিজ্ঞ ও নির্ভরযােগ্য একজন মাঝি। তার নৌকা আমরা ভ্রমণের জন্যে ঠিক করেছিলাম । চারঘাটের ঘাট থেকে আমরা যাব বাঘার একটি পরিবহন ঘাটে। একসময় ওই ঘাটে বড় বড় নৌকা ভিড়ত। তাছাড়া সেখানে পদ্মা বেশ গভীর ও স্বচ্ছ । চাচা বললেন আমাদের যেতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগে যাবে। তবে ফিরতে সময় লাগবে আরও বেশি কারণ তখন আমরা স্রোতের বিপরীতে থাকব । ঠিক বেলা দশটায় আমরা যাত্রা শুরু করলাম । নৌকায় ওঠার পর থেকেই কাশেম চাচার জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা শুনছিলাম। তিনি প্রায় ৩০ বছর এ নদীতে নৌকা চালাচ্ছেন। নদীর কত লৌকিক ও অলৌকিক গল্প তিনি আমাদের বললেন । তবে একটি কথা আমার খুব বিশ্বাসযােগ্য মনে হলাে— চারঘাটের কুমিরের কথা। এক সময় নদীর এ অংশে প্রচুর কুমির থাকত। তবে এখন আর নদীতে কোনাে কুমির দেখা যায় না। আমিও কােনাে কুমির দেখিনি। তবে নদীর দু’ধারে দেখা গ্রাম ও প্রকৃতি আমার হৃদয়কে হরণ করেছিল । হাটের দিন থাকায় আমি নদীর ধারের মানুষের ব্যস্ততার অনেক চিত্রই দেখতে পেয়েছিলাম । নৌকায় থেকে নদী দেখা এ আমার প্রথম । অষ্টম শ্রেণিতে আমি বুদ্ধদেব বসুর ‘নদীর স্বপ্ন’ কবিতা পড়েছিলাম। সেখানকার ছােকানু ও তার কিশাের ভাইয়ের কথা আমার বার বার মনে পড়ছিল। তারা সারাদিন নদীতে কত দৃশ্য দেখেছিল । আমিও তাদের মতাে নদীতে পালতােলা নৌকার ছুটে চলা প্রত্যক্ষ করলাম মাছ ধরার সময় এখন নয়।তারপরও কত জেলে নদীতে জাল ফেলছে। একটা বিয়ের নৌকা দেখতে পেলাম। নবদম্পতি নৌকায় বেশ আনন্দ নিয়ে যাচ্ছিল। তবে সেটি যন্ত্রচালিত নৌকা ছিল । তাছাড়া নদীতে বালুর নৌকাও দেখতে পেলাম।

 

কিছুদূর আসতেই সূর্যাস্ত নেমে এলাে নদীর বুকে। পশ্চিম দিক লাল রঙে সজ্জিত হলাে । পাখিরা ফিরতে থাকল ঘরে।নৌকাগুলােও আস্তে আস্তে পাড়ে ভিড়তে থাকল । কিন্তু বৈদ্যুতিক বাতির কল্যাণে নদীর ধারের ইলেকট্রিক খুঁটিগুলাে জ্বলে উঠল । অন্ধকারের নিস্তব্দতা যেন ভেঙে গেল ওই সময়ে। সূর্যাস্তের পর পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ আকাশে ভেসে উঠল । নদীর জলে সেই চাদের প্রতিচ্ছায়া পড়ল। আমরা ফিরে এলাম আমাদের যাত্রা শুরুর স্থানে। কিছু খাবার-দাবার বেঁচেছিল। কিছুতেই আমার মন নদীর পাড় থেকে নড়ছিল না। ডিজিটাল ক্যামেরা থেকে বার বার তােলা ছবিগুলাে দেখছিলাম। আর আমার সামনে জীবন্ত হয়ে উঠছিল মুহূর্তগুলাে । মনটা উদাস হয়ে গেল। আমি ফিরে এলাম বাড়িতে। আমার সমস্ত জীবনে হয়ত নৌকা ভ্রমণের সেই দিনটির স্মৃতি বা অভিজ্ঞতা অমলিন হয়ে থাকবে | নদীর ধারে আমার জীবনের অনেক সময় কেটেছে। কিন্তু তাতে নদীর প্রতি আমার আকর্ষণ এতটুকুও কমেনি। বরং বার বার আমি নদীর বুকে ফিরে যেতে চেয়েছি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *